• Breaking News

    রেমিট্যান্স এর উপর নির্ভর করে স্থিতিশীল অবস্থানে দেশের জাতীয় অর্থনীতি



    বাংলাদেশের বৈদেশিক বানিজ্যের ঘটাতি মোকাবেলা এবং দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতিশীল রাখতে বিগত এক দশক থেকেই বিদেশের কর্মরত প্রবাসী কর্মীদের পাঠানো রেমিট্যান্স গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। বিশেষ করে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশ গড়ে ২৪ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স আয় করছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসেব মতে, চলতি সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম ২২ দিনে আমাদের সম্মানিত প্রবাসী কর্মীরা দেশে ১,২৬৫.৪ মিলিয়ন বা প্রায় ১.২৭ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন। যা কিনা আজ ২৮শে সেপ্টেম্বরে প্রতি ডলারের বিপরীতে ১০১.৪৫ টাকা বিনিময় হার ধরলে হয় ১২,৮৩৮ কোটি টাকা।
    চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম জুলাই মাসে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ রেমিট্যান্স আসে আমেরিকা থেকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের দেয়া তথ্যমতে, গত জুলাই মাসে আমেরিকা থেকে বৈধ ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে দেশে রেমিট্যান্স আসে ২৬৩.৩ মিলিয়ন ডলার। সৌদি আরব থেকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৪৯.৬ মিলিয়ন ডলার এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে তৃতীয় সর্বোচ্চ ৩০৫.৩ মিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স আসে।
    আবার গত জুলাই মাসে যুক্তরাজ্য থেকে ১৪১.৯ মিলিয়ন ডলার, কুয়েত থেকে ১৪১.৯ মিলিয়ন ডলার, মালয়েশিয়া থেকে ১৩৯.৩ মিলিয়ন ডলার, ইতালি থেকে ১২৯.৭ মিলিয়ন ডলার, কাতার ১০৬.৯ মিলিয়ন ডলার, ওমান থেকে ৭৮.২ মিলিয়ন ডলার, বাহরান থেকে ৪৪.৫ মিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স দেশে আসে। বিশ্বের অন্যান্য সকল দেশ থেকে মোট ২৪০.২ মিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স পাঠায় আমাদের প্রবাসী কর্মীরা। সে হিসেবে গত জুলাই মাসে মোট ২০৯৬.৯ মিলিয়ন ডলার এবং আগস্ট মাসে দেশে রেমিট্যান্স ২.০৯৬ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স আয় হয়।
    তবে বাংলাদেশে একক কোন মাস হিসেবে সবচেয়ে বেশি রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স আসে গত ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই মাসে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্যে দেখা যায়, গত ২০২০ সালের জুলাই মাসে প্রবাসী কর্মীরা দেশে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন ২.৫৯৮ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ। আর এই রেমিট্যান্স কিন্তু দেশের বৈদেশিক বানিজ্য ঘাটতি (আমদানি-রপ্তানি) মোকাবেলা এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ শক্তিশালীকরণে এক রকম নিরবেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।
    বাংলাদেশ ব্যাংকের দেয়া হালনাগাদ তথ্যমতে, ২০২১-২২ অর্থবছরের রেমিট্যান্স প্রবাহ আশাঙ্ক্ষাজনক হারে ১৫.১২% হ্রাস পেয়ে ২১.০৩২ বিলিয়ন ডলারে নেমে যায়। যেখানে কিনা ২০২০-২১ অর্থবছরের ১২ মাসে বৈধ ব্যাংকিং চ্যানেলে মোট ২৪.৭৮ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স দেশে পাঠায় প্রবাসী কর্মীরা। আবার ২০১৯-২০ অর্থবছরে রেমিট্যান্স আয় হয় ১৮.২০ বিলিয়ন ডলার। তবে সবচেয়ে আশাঙ্খাজনক বিষয় হলো যে, বাংলাদেশে প্রতি বছর গড়ে প্রায় ৬ থেকে ৭ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স অবৈধ হুন্ডি বা মানি লন্ডারিং এর মাধ্যমে দেশে আসে। এতে করে আমাদের দেশ বিপুল পরিমান বৈদেশিক মুদ্রা প্রাপ্তি থেকে সরাসরি বঞ্চিত হচ্ছে। সে হিসেবে বাস্তবে গড়ে মোট প্রায় ৩০ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স আসার কথা ছিল।
    চলতি ২০২২ সালের ৭ই জুন প্রকাশিত দ্যা ডেইলী স্টারের দেয়া তথ্যমতে, ভারতের প্রবাসী কর্মীরা কিন্তু বাংলাদেশ থেকে ২০২০ সালে প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলারের অর্থ নিজ দেশে নিয়ে যায়। তাছাড়া ভারত ২০১৬ সালে ৮.৩২ বিলিয়ন ডলার এবং ২০১৪ সালে ৪.৫ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ বাংলাদেশ থেকে রেমিট্যান্স বাবদ আয় করেছিল বাংলাদেশ থেকে। আর বর্তমানে ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আয়ের ক্ষেত্র হচ্ছে বাংলাদেশ। আমাদের বন্ধুদেশ ভারত, ছিন এবং রাশিয়া থেকে উল্লেখ যোগ্য পরিমাণ রেমিট্যান্স আয় এক রকম হয় না বললেই চলে। যদিও এই তিনটি দেশই আমাদের অর্থনীতির মূল বৈশ্বিক সুবিধাভোগী দেশ।
    বিশ্বব্যাংকের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, রেমিট্যান্স আয়ের বিচারে বিশ্বের সর্বোচ্চ ৭ম স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। করোনা মহামারীর পরবর্তী সময়ে সারা বিশ্বে কারিগরি জ্ঞান সম্পন্ন দক্ষ কর্মী ও মধ্যপ্রাচ্যে বিশেষ করে সৌদি আরবের প্রাইভেট সেক্টরে আবারো অদক্ষ শ্রমিকের বিপুল চাহিদা সৃষ্টি হওয়ায় আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বাংলাদেশের আনুমানিক ৪৪ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ রেমিট্যান্স হিসেবে আয় করার ব্যাপক সুযোগ রয়েছে। তবে সব কথার শেষ কথা হলো যে, আমাদের কিন্তু সবার আগে প্রবাসী কর্মীদের আর্থিক স্বার্থ ও বিদেশের মাটিতে নিরাপত্তার বিষয়টি সর্বোচ্চভাবে নিশ্চিত করতে হবে। বিদেশের মাটিতে থাকা আমাদের দূতাবাসগুলোকে সেখানে কর্মরত সকল প্রবাসী কর্মীর সমস্যা এবং বিভিন্ন ধরণের জটিলতা নিরসনে আন্তরিকভাবে কাজ করতে হবে।
    সিরাজুর রহমান, (Sherazur Rahman), সহকারী শিক্ষক ও লেখক, সিংড়া, নাটোর, বাংলাদেশ।